ঘূর্ণিঝড়, বাংলায় যা ঘূর্ণিঝড় আবহাওয়া নামে পরিচিত, একটি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মূলত উষ্ণমণ্ডলীয় সাগরে সৃষ্ট একটি শক্তিশালী ঘূর্ণায়মান ঝড়। এই ঝড় বাতাসকে কুণ্ডলী আকারে উপরে টেনে তোলে এবং একটি বিশাল মেঘ ও বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে একটি শান্ত এলাকা থাকে, যা “চোখ” নামে পরিচিত। এই চোখের চারপাশে বাতাসের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি থাকে এবং ধ্বংসলীলা চালায়।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রধান কারণ হল সমুদ্রের জলের উষ্ণতা। যখন সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে, তখন প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প উপরে উঠতে শুরু করে। এই জলীয় বাষ্প উপরে উঠে ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি করে এবং ঘনীভূত হওয়ার সময় লীন তাপ নির্গত করে। এই লীন তাপ আশেপাশের বাতাসকে আরও উষ্ণ করে তোলে, যা আরও জলীয় বাষ্পকে উপরে টানতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকলে একটি নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয় এবং আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বাতাস দ্রুত বেগে সেই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে এই বাতাস সোজা পথে না এসে কুণ্ডলী আকারে ঘুরতে শুরু করে এবং ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দেয়।
ঘূর্ণিঝড় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব। স্যাটেলাইট, রাডার এবং কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ, তীব্রতা এবং সম্ভাব্য আঘাত হানার স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই পূর্বাভাস জনগণের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বাভাস পাওয়ার পর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও, ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দলগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়, যাতে দুর্যোগের পর দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শক্তিশালী বাতাস ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ফেলে। সমুদ্রের জলচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভূমিধসও হতে পারে, যা রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের পর পানিবাহিত রোগ, যেমন কলেরা ও টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ঘূর্ণিঝড় একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এর মোকাবিলা করা সম্ভব। দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া মাত্রই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য খাদ্য, জল ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুতের খুঁটি ও তার থেকে দূরে থাকতে হবে এবং ভেঙে যাওয়া গাছপালা বা অন্যান্য বিপজ্জনক বস্তু থেকে সাবধান থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া উচিত। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।